গৌরব সেন,দক্ষিণবঙ্গ:- ১৮-এর দশকে যখন সারা ভারতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তুলকালাম পরিস্থিতি তখন ব্রিটিশদের পক্ষপাত নেওয়া রাজাদের বন্দী করেন মীরকাশিম,সেই তালিকায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বন্দীদশা থেকে মুক্ত হলে জানতে পারেন দূর্গাপূজো শেষ। কথিত আছে উক্ত সময়ে সমস্ত কৃষ্ণনগরে দূর্গা পূজো অনাড়ম্বর পূর্ন হয় এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান স্বয়ং মা দূর্গা রূপের এবং নির্দেশ দেন জগদ্ধাত্রী রূপে পূজো করার। প্রথম পূজোর ভিত্তিস্থাপন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ী তে হলেও পরবর্তী তে সারা বাংলায় ছড়িয়ে পরে এই পূজোর রিতী। আনুমানিক ১৭৬৩-১৭৬৪ সাল নাগাদ কার্তিক মাসের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় দেবী হৈমন্তীকার আরাধনা যা আজও একই নিয়মনীতি এবং নিষ্ঠা মেনেই অনুষ্ঠিত হয়।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বন্ধু ছিলেন ফরাসি দের দেওয়ান তথা চন্দননগরের জমিদার ইন্দ্রনাথ রায়,তিনি পরবর্তী তে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী অধিষ্ঠাত্রীর কাঠামোর থেকে পেরেক এনে অবিকল আরেকটা কাঠামো বানিয়ে শুরু করেন চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজো। তবে অনেক ইতিহাসবিদ দের মতে কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম এর বিধবা কন্যা চন্দননগর নিকটস্থ ভদ্রেশ্বরের তেঁতুল তলায় শুরু করেন জগদ্ধাত্রী আরাধনা এবং ক্রমশই চন্দননগর ব্যাপি পৃষ্ঠপোষকতা ছড়িয়ে পড়ে জলঙ্গীপারে শুরু হওয়া স্বপ্নাদেশে পাওয়া মা জগদ্ধাত্রীর।
দেবী জগদ্ধাত্রী সাদা সিংহের উপর আসীন অবস্থায় দেখা যায়, তাঁর চারহাতে থাকে শঙ্খ,চক্র,ধনুক এবং তীর। অনেকের মতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশে যেমন দেখেছিলেন দেবীকে তেমনই এই রূপ তবে পুরাণ ঘাটলে খুব বেশী তথ্য পাওয়া না গেলেও একটি সূত্র মতে ত্রেতা যুগের শুরুতে করীন্দ্রাসুর নামে এক হস্তীরূপী অসুরকে বধের জন্য দুর্গার মতোই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের শক্তি থেকে সিংহবাহিনী, চতুর্ভুজা এই দেবীর জন্ম!
দিনে কালে জাঁকজমকপূর্ণতার একটা সূক্ষ লড়াই রয়েই গেছে চন্দননগর এবং কৃষ্ণনগর বাসীদের মধ্যে। আলোক সজ্জা এবং কোলকাতা থেকে নিকটস্থ হওয়ার কারণে চন্দননগর আলোচিত হলেও ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর পূজো, শহরের বুড়ীমার পৃষ্ঠপোষকতা,বিশ্ববিখ্যাত কৃষ্ণনগর (ঘূর্নি) মৃৎশিল্পী দের প্রতিমা এবং শোভাযাত্রার জন্য অনেকটা এগিয়ে কৃষ্ণনগরই বলা যায়,তবে বর্তমান সময়ে কৃষ্ণনগর সংলগ্ন মফস্বলি এলাকা তেহট্টতেও যথেষ্ট ধুমধাম চোখে পরে জগদ্ধাত্রী পূজোর।